কালোজিরা খাওয়ার ম্যাজিকাল উপকারিতা জানুন
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে কালোজিরা খাওয়ার চমৎ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। কালোজিরা একটি প্রাকৃতিক মহাঔষধ। এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান এবং পাচক এনজাইম। এসব উপাদানের জন্যই কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অসীম।
কালোজিরা মস্তিষ্কের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আধা চা চামচ কাঁচা কালোজিরা অথবা এক চা চামচ কালোজিরা তেল খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। আসেন এই আর্টিকেলে দেখে নেওয়া যাক কালোজিরা খাওয়ার ম্যাজিক্যাল উপকারিতা সম্পর্কে যা আপনার দেহের জন্য খুবই উপকারি হবে।
সূচিপত্র: কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
- কালোজিরার পুষ্টি উপাদান
- খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- কালোজিরা তেলের ব্যবহার
- টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কালোজিরা যেভাবে কাজ করে
- কালোজিরা ব্যবহারে সতর্কতা
- পরিশেষে
কালোজিরার পুষ্টি উপাদান
কালোজিরাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রোটিন,আয়রন এবং ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ. সি এবং ই। প্রতিগ্রাম কালোজিরায় ২০৮ মাইক্রোগ্রাম প্রোটিন থাকে। প্রোটিন আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়, শরীর আরো বেশি শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।
রক্ত তৈরিতে আয়রনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। দেহে আয়রনের মাত্রা কমে গেলে নানা সমস্যা দেখা দেয় যেমন শরীর ক্লান্ত বোধ করে, পেশীয় টিস্যু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাড় এবং দাঁত ভালো রাখতে ক্যালসিয়াম খুবই উপকারী। ফাইবার আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করে এবং গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করে।
আরও পড়ুন: রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। এতে হজম শক্তি বাড়ায়, খালি পেটে কালোজিরা খেলে পেটের ফোলাভাব ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে, দেহকে নানা ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ-প্রতিরোধ বৃদ্ধি থেকে থাকে। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের জন্যও কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। কালোজিরার পুষ্টিগুণ আপনার শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করবে।
কালোজিরার ব্যবহার প্রায় ২০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এটি প্রাচীন মিশরেও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। কালোজিরাতে রয়েছে ১০০ টিরও বেশি পুষ্টি উপাদান যার মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই নিয়মিত সকালে কালোজিরা খাবেন এবং এর উপকার সম্পর্কে আপনিই ধীরে ধীরে লক্ষ্য করতে পারবেন।
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
বর্তমানে বাংলাদেশের ডায়াবেটিকস রোগের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কালোজিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কালোজিরা রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনে দরকার হয় না। ডায়াবেটিস রোগীরা উপকার পেয়ে থাকেন।
গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রতিদিন দুই গ্রাম কালিজিরা খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমায়, ইনসুলুনের বাধা দূর করে এবং অগ্নাশয়ে বিটা কোষের কাজ বাড়ায়। কালোজিরা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি- মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। তাই যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা নিয়ম অনুযায়ী কালোজিরা সেবন করবেন তাহলেই ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
হজমের সমস্যা এখন প্রায় সবারই। হজম সমস্যা দূর করতে কালোজিরার গুরুত্ব অনেক। কারণ এত আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে, যা হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে খুবই ভালো কাজ করে থাকে। কালোজিরাতে থাকা ফাইবার পানি শোষণ করে পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং হজম শক্তি বাড়ায়। কালোজিরার বিশেষ উপাদান থাইমোকুইনোন জারণ চাপ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আবার কালোজিরা হজমকারী এনজাইমের উৎপাদন বাড়ায়।
যেভাবে খাবেন: হজমের সমস্যা দূর করতে ১-২ চা চামচ কালোজিরা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর সেটা ভালো করে বেটে পানির সঙ্গে গুলিয়ে খাবেন। প্রতিদিন ২-৩ বার খেতে থাকুন। এক মাসের মধ্যে দেখবেন পেটের সমস্যা দূর হবে। তার সঙ্গে আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মানুষ প্রতিনিয়ত নানা রকম অসুখে ভোগে এবং তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধও সেবন করে। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন যে নিয়মিত কালোজিরা খেলে আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারবে না। যেমন কালোজিরায় থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কালোজিরায় থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
কালোজিরাতে থাকা জিঙ্ক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম কালোজিরা। লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে কালোজিরার ভূমিকা অনেক । কালোজিরাতে রয়েছে ফসফরাস যা রক্ত জমাট বাঁধার কাজে সাহায্য করে। এছাড়াও এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কালোজিরা তেলের ব্যবহার
কালোজিরার তেলের অনেক গুনাগুন রয়েছে। কালোজিরা তেলে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষণা বলছে রক্তচাপ, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে কালোজিরা তেল। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও চুল মজবুত করতে এই তেল অনেক কাজ করে থাকে। কিন্তু কালোজিরা তেল সরাসরি ত্বক ও চুলে ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ এটি বেশ অম্লীয়।
যেভাবে কালোজিরার তেল ব্যবহার করবেন: চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ও কম সময়ে চুল পাকা ঠেকাতে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল, ক্যাস্টর অয়েল ও নারকেল তেল নিন। তিন রকমের তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বক ও চুলে লাগান। অন্তত আধা ঘন্টা রাখুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করুন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।
টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
টানা সাত দিন কালোজিরা খেলে অ্যাজমা, অ্যালার্জি এর মত নানা সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।
কালোজিরা খেলে আরো বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেমন পেটে ব্যথা, অরুচি, ডায়াবেটিকস, জন্ডিস, গলা ও দাঁতে ব্যথা, একজিমা, কাশি, হাপানি, অবসন্নতা, অলসতা, গায়ের ব্যাথা ও অন্যান্য সকল সংক্রমক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত কালোজিরা সেবন করবেন
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কালোজিরা যেভাবে কাজ করে
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কালোজিরা চমৎকার কাজ করে। রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি কালোজিরার বিভিন্ন উপাদান ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বেশ উপকারী। কালোজিরাতে রয়েছে ভিটামিন, নিয়াসিন, এবং আরো অন্যান্য উপাদান যা পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস থেকে ত্বককে রক্ষা করতে ও ত্বককে সুন্দর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে বেশ ভালো কাজ করে।
আমাদের বয়স ৪০ হওয়ার সাথে সাথেই ত্বকের চামড়ার লাবণ্য হারাতে শুরু করে। কালোজিরার মধ্যে থাকা লিনোলেনিক ও লিনোলেইক ফ্যটি এসিড ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। যেভাবে ব্যবহার করবেন: এক চামচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে এক চামচ অলিভ অয়েল, এক চা চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগান ও ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। প্রতিদিন রাতে শোবার আগে নিয়মিত একবার ব্যবহার করুন। বয়স ৫০ পার হয়ে গেলেও ত্বকের সৌন্দর্য অটুট থাকবে এবং ত্বক থাকবে টানটান ও সতেজ। এভাবে ব্যবহার করলে ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।
কালোজিরা ব্যবহারে সতর্কতা
কালোজিরা খেলে শরীরের নানা ধরনের উপকার হয়। কিন্তু কিছু কিছু সময় কালোজিরা এড়িয়ে চলা উচিৎ। যেমন গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয় পরিহার করা উচিৎ। আবার অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে পেট ব্যাথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। কালোজিরা আমাদের শরীরের নানা সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে তাই কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে আপনাকে কালোজিরা খেতে হবে।
আপনি যদি কালোজিরা চিবিয়ে খান তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন যেমন এভাবে খেলে আপনার শরীরের পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়ার উন্নতি করবে ও আপনার স্বাস্থের উন্নতিতে দারুণ অবদান রাখবে। তাই আপনাকে নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে
উপরের কথাগুলো থেকে আপনাদেরকে জানালাম কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা নানা রোগে ভোগেন যেমন: সর্দি , বাতের ব্যাথা, ডায়বেটিক, গ্যাস্ট্রিক, হজম সমস্যা, দাত ব্যাথা ইত্যাদি। উপরোক্ত কথাগুলো পড়ে আপনি যদি সেভাবে কালোজিরা ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই উপকার এসব রোগের সমাধান পাবেন। তাই কালোজিরাকে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহাঔষধ বলা হয়ে থাক। কালোজিরা অনেক সহজলোভ্য যা প্রায় সবার বাড়িতেই থাকে। তাই আপনি নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাহলেই আপনি নিজেই আপনার স্বাস্থের উন্নতি উপলব্ধি করতে পারবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url