ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার ১০০% কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান

ঘরোয়া উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার সমাধান সম্পর্কে আমরা জানবো। আমাদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় ব্রণ। আমাদের ত্বকের তৈলগ্রন্থি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এর আকৃতি বৃদ্ধি পায় ও তার ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে, যা পরবর্তীতে ব্রণে পরিণত হয়। 


সাধারণত মেয়েরাই ব্রণ ও ব্রণের দাগ নিয়ে বেশি সমস্যায় ভোগে। তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা ঘরোয়া উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাবো। আবার বাজারের কসমেটিকস ব্যবহার করেও ব্রণ দূর করা গেলেও তাতে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে। কিন্তু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না।

সূচিপত্র: ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রণ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

যে কারণে ব্রণ হয়

ত্বকের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো ব্রণ। সাধারণত বয়সসন্ধিকালে এটি বেশি দেখা যায়। এই সমস্যায় অনেকে ভুগে কিন্তু জানেনা এটি হওয়ার মূল কারণ সমূহ। সৌন্দর্য পুরোটাই নির্ভর করে মুখের দাগহীন ত্বকে। কিন্তু এই দাগহীন ত্বকের প্রধান শত্রু হলো ব্রণ। লোমকূপ তেল এবং মৃত ত্বকের কোষ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে ব্রণ তৈরি হয়। এই বাঁধা একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, যা প্রদাহ এবং সংক্রমণের দিকে পরিচালিত করে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের তারতম্য তৈলগ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হলে, ত্বকে সেবাম কোষগুলো বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। আর তা থেকেই ত্বকে সৃষ্টি হতে পারে ব্রণের।

ব্রণের প্রকারভেদ

ব্রণের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত এবং বন্ধ কমেডোনস (ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস), প্যাপিউলস (ছোট, কোমল লাল বাম্প) এবং পুসটুলস (সাদা বা হলুদ চেপা যায় এমন দাগ) এর মত উপরিভাগের ক্ষত। গভীর ক্ষতগুলির মধ্যে রয়েছে নডিউল (অনেক বেদনাদায়ক লাল পিণ্ড) এবং সিউডোসিস্ট (সিস্টের মতো অস্থির ফোলা)।

আরও পড়ুন: খুশকি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

চিনি যেভাবে ত্বকের ক্ষতি করে

চিনি বেশি খেলে আমাদের ত্বকের ব্রণ, ত্বকের প্রদাহ, ত্বকের দাগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় যে, মিষ্টি কিছু খেলেই শরীর ইনসুলিন নিঃসরণ শুরু করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখে। তবে ইনসুলিন নিঃসরণ শুরু হওয়া মাত্রই দেহে প্রদাহ তৈরি হয় যা থেকে ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে। এর কারণে আগে থেকেই ব্রণ, একজিমা বা ফুসকুড়ির সমস্যা থাকলে তাতে আরো সংক্রমণ হতে পারে। 

চিনি আমাদের দেহে কোলোজেনের গুণমান কমিয়ে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে। তার সাথে  এটি ব্রণের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। চিনি ব্রণের সমস্যা বাড়ানোর সাথে সাথে আমাদের দেহের অনেক ক্ষতি করে। দাঁতের ক্ষয় থেকে শুরু করে দেহের ওজন বৃদ্ধি পর্যন্ত সবই ঘটায় চিনি।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ। জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা-২০২০ অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক দেড় লিটার থেকে সাড়ে তিন লিটার (৬-১৪ গ্লাস ) পানি পান করা উচিৎ। আবার পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ব্রণ হতে পারে।                              

শরীর ডিহাইড্রেট হলে ত্বক টানটান ও শুষ্ক বোধ করে। শুষ্ক ত্বক আরো বেশি তেল উৎপাদন করতে পারে, যা ছিদ্রগুলোতে জমা হয়ে ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। তাই যদি ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

ব্রণের জন্য রসুন ও অ্যালোভেরার ব্যবহার

আমাদের ত্বকের জন্য রসুন ও অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। তিন চারটি রসুনের কোয়া থেঁতো করে এর সঙ্গে অ্যালোভেরার জেল ও সামান্য পানি মিশয়ে ব্রণের ওপর বা আশেপাশে লাগান। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে রসুন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। সরাসরি মুখের ত্বকে রসুন ব্যবহার করার আগে আপনার হাতে একটু রসুন ঘঁষে নেন। ‍যদি জ্বালাপোড়া ভাব হয় তাহলে মুখের ত্বকে রসুন ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার পরিহার

অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ব্রণের কারণ হতে পারে তবে তৈলাক্ত খাবার পরিহার করলেই ব্রণ দূর হবে না। ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ। ব্রণের কারণ হরমোনের পরিবর্তন, অতিরিক্ত তেল উৎপাদন, ব্যাকটেরিয়া প্রদাহ ও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি খাওয়া।

ব্রণের সাথে সরাসরি তৈলাক্ত খাবারের সম্পর্ক নেই তবে হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে বিশেষ কিছু হরমোনের কারণে এই তৈলগ্রন্থির নি:সরণ বেড়ে যেতে পারে। হাত দিয়ে ক্রমাগত খুটলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে। তাই আমাদের উচিৎ ব্রণ দূর করতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা।

সঠিক পরিমাণে ঘুমানো

আমাদের ত্বকের ও চেহারা উন্নত করতে হলে চিকিৎসকরা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেয়। ঘুমের অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে ত্বকের ব্রণ সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। আবার ঘুমের অভাব হলে আমাদের মানসিক চাপ বাড়ে। 

মানসিক চাপ বাড়লে শরীর কোটিসল তৈরি করে যা ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে চর্ম রোগের সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে। ঘুমের অভাব হলে শরীরের হরমোনের তারতম্য ঘটে এতে মানসিক চাপ বাড়ে তেমনি ত্বকের উপরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ

ব্রণের সমস্যা দূর করতে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ওমেগা ৩, ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। ত্বকের যে কোন ধরনের দাগ দূর করতে কাজ করে তরমুজ। তরমুজে থাকে ভিটামিন এ, বি এবং সি। এসব উপাদান তত্ত্বকে সতেজ, উজ্জল এবং আর্দ্র রাখে। তরমুজ খেলে তা ব্রণ দূর করে এবং ব্রণের দাগও কমায়। 

আপেল আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী। আপেলে থাকে প্রচুর পেকটিন। এটি হলো ব্রণের শত্রু। তাই ত্বককে ব্রণমুক্ত রাখতে নিয়মিত আপেল খান। আখরোট খাওয়ার অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে হলো এটি ত্বকের মসৃণতা ও কোমলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আখরোটের তেলে থাকে লিনোনিক এসিড, যা ত্বকের  গঠন বজায় রাখতে কাজ করে। এটি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। তাই ত্বক ভালো রাখতে উপরোক্ত খাবার গুলো খাওয়া উচিৎ।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার

শরীরচর্চা থেকে সৌন্দর্য রক্ষা সবকিছুতেই কার্যকর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। নিয়মিত এটি ত্বকে লাগালে ত্বকে বলিরেখা দেখা যায় না। ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখতেও সাহায্য করে এই ভিনেগার। এছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে ব্রণের প্রকোপ কমে যায়। তবে এই ভিনেগার এসিডিক। তাই সরাসরি মুখে লাগানো উচিত নয়। পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

ব্রণের সমস্যা কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের নিয়ম হলো দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে দুই কাপ পানি আর এক চা  চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে মুখ এবং গলা স্প্রে করুন। টোনার স্প্রে করার সময় অবশ্যই চোখ বন্ধ রাখুন। শুষ্ক ত্বকে এই টোনার ব্যবহার করবেন না। অ্যালোভেরা ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই টোনার কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ত্বক সুস্থ রাখে।

লেখকের শেষকথা

সুন্দর ত্বকের প্রধান শত্রু হলো ব্রণ। ব্রণ আমাদের ত্বককে অসুন্দর করে তোলে। ব্রণ হলে সেখানে কোনোভাবে হাত বারবার হাত দেওয়া যাবে না। উপরোক্ত বিবরণ থেকে আমরা বুঝলাম ঘরোয়া উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার সমাধান। খুব হালকা পরিমাণে ব্রণ থাকলে সেটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। এটি ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করা যাবে। কিন্তু যখন এটি দেখতে অনেক খারাপ লাগে ও জীবনযাপনকে ব্যাহত করে তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url