খুশকি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আপনাকে জানাবো। ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূর করার জন্য লেবুর রস, অ্যালোভেরা, নারকেল তেল, পেঁয়াজের রস, ভাতের পানি, রসুন, আপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সামুদ্রিক মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোটের মতো খাবার খেলে মাথায় খুশকি সংক্রমণ অনেকটাই দূর হয়।

খুশকি থেকে মুক্তির উপায়

খুশকি শীতের সময় বেশি হয় কারণ শুষ্ক আবহাওয়ায় অনেক ধুলোবালি উড়াউড়ি করে আর সেই মাথায় সেই ধুলোর আস্তরণ জমে আর মাথায় মৃত চামড়া সৃষ্টি করে। যদি মাথা ঠিক মতো পরিষ্কার করা না হয় তাহলে মাথার ত্বকে খুশকি জমতে থাকে। এর কারণে মাথার চামড়া চুলকায়।

সূচিপত্রঃ খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জেনে নিন

অ্যালোভেরার ব্যবহার

অ্যালোভেরা চুলের পুষ্টি যোগায়। অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিতে খুবই উপকারি। মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করে। এটি চুলকে হাইড্রেটেড রাখে। অ্যলোভেরা  ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে ত্বক রক্ষা করে। তাই মাথার ত্বক থেকে খুশকি দূর করতে এটি বেশ কার্যকর। চুলকে ছোট ছোট ভাগ করে নিয়ে অ্যালোভেরার রস মাথার ত্বকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

অ্যালোভেরা জেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে।

নারিকেল তেলের ব্যবহার

নারিকেল তেলে খুশকি থেকে ‍মুক্তি পাওয়ার উপায় এ মধ্যে একটি। নারিকেল তেলের অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকির সমস্যা দূর করে। নারিকেল তেলের সাথে কর্পুর, তুলসীর তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল তেল গরম করে চুলের গোড়ায় লাগান। তারপর গরম তোয়ালে দিয়ে চুল আটকে রাখেন। ১৫ মিনিট পর খুলে ফেলুন।

চুলে অন্তত একদিন নারিকেল তেল ব্যবহার করুন, যা চুলকে করে তুলবে খুশকিমুক্ত। সপ্তাহে, একদিন নারিকেল তেল হালকা গরম করে মাথার তালুতে সামান্য করে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। গরম ভাপে খুশকি মাথার তালু থেকে উঠে আসবে। পরপর তিন সপ্তাহ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

লেবুর রসের ব্যবহার

খুশকি রোধে লেবুর রস খুবই উপকারী। কারণ লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। যেভাবে ব্যবহার করবেন: নারিকেল তেল ও লেবুর রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন তারপর শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং পরদিন শ্যাম্পু করুন। এভাবে ব্যবহার করলে আপনার মাথার খুশকি যেমন কমবে তেমনি আপনার ‍চুল অনেক ঝকঝকে হবে।

আবার খুশকি সমস্যা দূর করতে মধু ও লেবুর রস খুব উপকারি। যেভাবে ব্যবহার করবেন: ৪ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ লেবুর সাথে সামান্য পানি নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর চুলের গোড়ায় ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে দারুণ উপকার বুঝতে পারবেন।

লেবুর রস ও আমলকীও খুশকি দূল করতে বেশ উপকারী।যেভাবে ব্যবহার করবেন: দুই টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ আমলকীর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান এবং আধা ঘন্টা রেখে দেন। এরপর শ্যাম্পু ‍দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে আপনার চুল হবে শক্ত ও খুশকি দূর হবে।

মাথার ত্বকের জন্য সুষম খাদ্য

আপনার মাথার ত্বকের উপকার করবে এমন খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ। জিংক ও ভিটামিন-বি  সমৃদ্ধ খাবারগুলো খুশকি রোধে সাহায্য করতে পারে। জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে ঝিনুক, কুমড়োর বীজ, কাকড়া ইত্যাদি। ভিটামিন বি এর উংসগুলোর মধ্যে রয়েছে দই, গাজর, টমেটো, ডিম, চিনা বাদাম ও ডার্ক চকলেট।

খুশকি থেকে মুক্তির উপায়


পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমেও খুশকি দূর হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মাথার ত্বক হাইড্রেট থাকে মাথার ত্বককে হাইড্রেট করলে এবং ময়েশ্চারাইজ করলে খুশকি, ভঙ্গুর চুল এবং মাথার চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনাকে নিয়মিত সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি করা উচিৎ। তাহলে আপনার মাথার ত্বকের সমস্যা ও খুশকি রোধে ভালো ফলাফল পাবেন।

চুল পরিষ্কার রাখা ও শ্যাম্পুর ব্যবহার

মাথার ত্বক ভালো রাখতে ও খুশকি দূর করতে চুল পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। চুল পরিষ্কার রাখতে ও খুশকি দূরীকরণে খুশকি বিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। যেভাবে ব্যবহার করবেন: খুশকি রোধে চুল ধুয়ে তারপর কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ভালোভাবে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। এরপর দুই থেকে পাঁচ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে খুশকি কমে যাবে। 

চুল পরিষ্কার রাখতে হলে চুলকে সকল ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। চুলে ধুলা পড়লে চুল অপরিষ্কার হয়ে পড়ে ও ময়লা জমতে থাকে। যার ফলে মাথার ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয় যেমন  ‍খুশকি, চুল ভঙ্গুর হওয়া ও মাথার চুলকানি। তাই আপনাকে সর্ব অবস্থায় চুলকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার

আপেল সিডার ভিনেগার খুশকি দূর করার জন্য অনেক কার্যকরী। আপেল সিডার ভিনিগারে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা মাথার ত্বকের খুশকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। যেভাবে ব্যবহার করবেন: একটি পাত্রে পানি ও আপেল সিডার ভিনেগার নিন এবং তার মধ্যে কয়েক ফোটা জাগা টিট্রি ওয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার সেটা মাথার তাকে মেসেজ করে মেখে নিন ও ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন ভালো ফলাফল পাবেন।

খুশকি থেকে মুক্তির উপায়


আবার আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে অলিভ অয়েল দিয়ে ব্যবহার করলেও অনেক উপকার পাবেন। যেভাবে ব্যবহার করবেন: প্রথমে হাতের তালুতে অলিভ ওয়েল নিয়ে মাথায় মেসেজ করে নেন। এবার হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল যখন শুকিয়ে যাবে তখন মাথার ত্বক ও চুলে আপেল সিডার ভিনেগার লাগান। প্রতি মাসে এভাবে দুইবার ব্যবহার করতে থাকুন তাহলে আপনার মাথার ত্বক ভালো থাকবে, খুশকি দূর হবে এবং চুল পড়া কমবে।

খুশকি রোধে রসুনের ব্যবহার

খুশকি দূর করার আরেকটি সহজলভ্য উপায় হচ্ছে রসুনের ব্যবহার। রসুনের ব্যবহারের ফলে ঘরোয়া উপায়ে খুশকি প্রতিকার করা যায়। রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাচাতে সাহায্য করে। এছাড়াও রসুনে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, অ্যামাইনো এসিড, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা চুলকে খুশকি মুক্ত, চুলকে মজবুত ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে থাকে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন: একটি বড় সাইজের রসুন থেকে দুইটি কোয়া বা মাঝারি সাইজের রসুন হলে ৪ টি কোয়া নিয়ে রস করুন। তারপর এই রসুনের রসের সাথে ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এখন এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন তাহলে খুশকি দূর হবে। কিন্তু রসুন কখনো সরাররি মাথার ত্বকে লাগাবেন না কারণ এতে মাথার ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

পরিশেষে

খুশকি দূর করার জন্য আপনারা অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকেন যেমন: নানা ধরনের শ্যাম্পু। দীর্ঘদিন এসব ব্যবহার করলে আপনার মাথার ত্বকে নানা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে এসব ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে। ঘরোয়া উপায়ে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে হবে যেমন: অ্যালোভেরা, রসুন, নারিকেল তেল, লেবুর রস, আপেল সিডার ভিনেগার। উপরোক্ত বিষয় গুলো ভালো ভাবে পড়লে এবং তা অবলম্বন করলে খুশকি দূর হবে। তাও যদি খুশকি বাড়তেই থাকে তাহলে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। আশা করি খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url